প্রতিনিধি মাধবপুর (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের মাধবপুরে হাজী মিয়া চাঁন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাসহ ৫ শিক্ষককে তুচ্ছ কারনে শোকজ করে বিপাকে পড়েছে কবির হোসেন নামে এক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও)।এর ফলে বেড়িয়ে আসছে তার দুনীতির কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য ।
শুধু শোকজ করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষকদের ফেসবুক গ্রুপে শোকজ কপি পাবলিশ করে দিয়ে অফিসিয়াল গোপনীয়তাও ভেঙেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেক শিক্ষক। শিক্ষকদের দাবী উর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে ওনি আমাদের আগলে রেখে শাসন করবেন। ডিপার্টমেন্টের বিষয় বাইরে ছড়ানোর কি দরকার ছিল।যেটি নিয়েও আলোচনা সমালোচনাসহ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মধ্যে।একাধিক সূত্রে জানা যায় অতীতে মাধবপুরে ওই এটিও এভাবে শোকজের ভয় দেখিয়ে প্রাইমারির নিরীহ শিক্ষকদের কাছ থেকে বহু অবৈধ ঘুষ আদায় করেছে।
জানা যায়,গত ৯ এপ্রিল ঈদ ও রমজানের দীর্ঘ ছুটির পর বিদ্যালয় খোলার দ্বিতীয় দিনে এটিও কবির হোসেন উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামে হাজী মিয়া চাঁন স্কুল পরিদর্শনে যান।সেখানে শিক্ষকদের অনুপস্থিত, ছাত্রসংখ্যা কম, প্রধান শিক্ষকের অদক্ষতা ইত্যাদির অজুহাত দেখিয়ে ৫ শিক্ষককে শোকজ করেন।কোন প্রকার সতর্ক না করে ৭ দিনের ভিতরে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়া নির্দেশনা দেন।অন্যথায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।বিষয়টিতে ওই কর্মকর্তার বাড়াবাড়ি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।পরে ওই দিন স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা শম্পা রানী চক্রবর্তী ওই কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার জন্য কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে উত্তোলন করেন,যার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা হবে। যদিও এই ঘটনা ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে ওই শিক্ষিকা তা অস্বীকার করেন।
প্রসঙ্গত,ওই শোকজপত্রে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, কেন তার সহকর্মীরা তার নির্দেশ অমান্য করেন। এদিকে শোকজে বেঁধে দেয়া ৭ দিন পার হলেও কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। শিক্ষকদের তরফ থেকে কোন লিখিত জবাব দেয়া হয়নি। স্কুলের পরিদর্শন খাতায় ওই কর্মকর্তা সে মন্তব্য লিখেছিলেন তারও পরিবর্তন করেননি। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে এটিওর পক্ষ থেকে চলে ম্যানেজ ব্যবস্থা।
অভিযোগ উঠেছে,ওই এটিও কবির হোসেন শিক্ষকদের শোকজের ভয় দেখিয়ে ঘুষ বানিজ্য করে যাচ্ছেন বহুদিন ধরে। নিরীহ অনেক শিক্ষকগন স্লিপ ফান্ডের টাকা থেকে তাকে ঘুষ দিয়ে পুষিয়ে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক নেতা জানান, শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে টাকা ইনকাম করা তার নেশা।শিক্ষকগন এসিআর এ স্বাক্ষর আনতে গেলে উনাকে ৩০০থেকে ৫০০টাকা দিতে হয়।
মেডিকেল ছুটি গ্রহণ ও ছুটি শেষে যোগদান করতে গেলে উনাকে দিতে হয় ১থেকে ২হাজার টাকা।
সম্প্রতি বরতল স্কুলের সহকারী শিক্ষক আমেনা বেগমকে ১০হাজার টাকার বিনিময়ে ১মাস পিছিয়ে মাতৃত্ব ছুটি অনুমোদন করেন। তার সিজার হয় ২৪ ফেব্রুয়ারিতে অথচ তার ছুটি দেখানো হয় ৮ই মার্চ থেকে। লেবামারা স্কুলের শিক্ষক প্রভাত পালকে ১৫ হাজার টাকার ঘুষের বিনিময়ে আইপিএমইএস এ অনলাইনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নীতিমালা ভেঙে বদলি করেন।
অথচ প্রধান শিক্ষক এই এটিওকে অবগত করলেও তিনি ভ্রুক্ষেপ করেনি।শিক্ষক নেতারা জানান তার বিরুদ্ধে দূর্ণীতির শেষ নেই।ডিপিএড তালিকায় সংযুক্তি হতে গেলে দিতে হয় টাকা নাম বাদ দিতে গেলেও দিতে হয় টাকা।
ফলে তার কারনে আমাদের উপজেলার প্রাইমারিতে অনিয়ম বেড়েই চলেছে। নিরীহ শিক্ষকরা অত্যাচার ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সূত্রে জানা যায় ,ওই শোকজের কারনে ওই এটিও উল্টো চাপের মধ্যে রয়েছেন। বিদ্যালয়ের পরিদর্শন খাতার মন্তব্যও তুলতে পারছেন না। এটিও শিক্ষকদের শোকজের জবাব দিতে বললেও শিক্ষকরা কোন জবাব দেয় নি।এই বিষয়টি নিয়ে জানতে উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জাকিরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।আমরা প্রাইমারি শিক্ষকদের শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য কাজ করছি।
অভিযুক্ত উপজেলার সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা(এটিও) কবির হোসেন এর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি ছুটিতে রয়েছি। সরাসরি এসে আপনাদের সাথে কথা বলব।
হবিগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও)মোহাম্মদ শাহ আলম জানান, আমি নিজেও সেদিন মাধবপুর পরিদর্শন করেছি। এই বিষয়টি তো শুনি নাই, অবশ্যই বিষয়টি মারাত্মক। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।